Wellcome to National Portal
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ঐতিহ্যবাহী লোক ও কারুশিল্প

বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে লোক ও কারুশিল্পের অবস্থান মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত, বাঙালির আত্মপরিচয়ের প্রতীক, কায়িক শ্রমে ও নান্দনিক কৌশলে ব্যবহারিক বস্তুকে সৌন্দর্য ও কারুমন্ডিত করার উদ্দেশ্য অলঙ্ককরণকেই আমরা ‘কারুশিল্প’ হিসেবে অভিহিত করি। অন্যদিকে যৌথ চেতনার ফসল হচ্ছে লোকশিল্প। যা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহজ-সরল পরিবেশে তৈরি হয়। একজন প্রধান স্রষ্টার পরিবেশে তৈরি হয়। একজন প্রধান স্রষ্টার সৃষ্টিকর্ম আরও কয়েকজনের স্পর্শে হয়ে ওঠে সর্বজনীন লোকশিল্প। গঠনশৈলী, বিষয়বস্তু, উৎপাদন ও নির্মাণ কৌশলে লোকজ রূপ থাকায় তা লোকশিল্প হিসেবে পরিগণিত হয়। আর সুশৃঙ্খল সূত্রমাফিক তৈরি করা হলেও কারুশিল্পে থাকে ঐতিহ্যের সমাচার। এরপরও তা সৃজনশীলতা পাশাপাশি বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাসে বাংলাদেশের কারুশিল্প ও কারুশিল্পীদের অবদান অনস্বীকার্য। আবহমানকাল থেকেই এদেশের লোক ও কারুশিল্প নিজ নিজ ধারায় প্রবহমান।

আয়তন ও বৈচিত্র্যের তুলনায় বাংলাদেশের লোক ও কারুশিল্পের ভান্ডার অনেক বেশি সমৃদ্ধ। কারুশিল্পের বিশাল ভান্ডারে রয়েছে জামদানি, সতরঞ্জি, ধাতব শিল্প, শঙ্খ শিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, ঝিনুক শিল্প, পুতুল শিল্প, পিতল-কাঁসা শিল্প, বাঁশ-বেত শিল্প, শোলা শিল্প ইত্যাদি।  এছাড়া নকশি কাঁথা, নকশি শিকা, শীতল পাটি, মাটির ফলকচিত্র, পাতা ও খড়ের জিনিস, লোকচিত্র প্রভৃতি আমাদের লোক ও কারুশিল্পের নিদর্শন। বেঁচে থাকার তাগিদে কাজ করতে গিয়ে এবং অবসর মুহূর্তে বসে এসব শিল্প-সম্পদ তৈরি করেছে কারুশিল্পীরা। বাংলাদেশের লোকজীবনের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্যগুলোই বিধৃত হয়েছে আমাদের লোক ও কারুশিল্পে। এসব শিল্প আমাদের ঐতিহ্যের প্রতীক, সেই সাথে গৌরবেরও।


 তাঁত ও বয়ন শিল্প : বাংলাদেশের তাঁত ও বয়ন শিল্পের ঐতিহ্য সর্বজনবিদিত। বিশেষ করে এ দেশের মসলিন ও জামদানির রয়েছে বিশ্বজোড়া খ্যাতি। কথিত আছে, এই মসলিন এবং জামদানি সারাবিশ্বে উঁচুমানের বস্ত্র হিসেবে বিবেচিত ছিল প্রায় অষ্টাদশ শতকের শেষ পর্যন্ত। হস্তচালিত তাঁত শিল্পেরই ফসল ঢাকাই মসলিন। আর সূক্ষ্ম জমিনের ওপর দুটি তোলা বিচিত্র সব নকশামন্ডিত মসলিনের নাম হচ্ছে- জামদানি। জামদানি মূলত মসলিনেরই অংশ। প্রাচীন আমলে উন্নতমানের জামদানি তৈরি হতো ঢাকা, ধামরাই, সোনারগাঁ, বাজিতপুর, জঙ্গলবাড়ী প্রভৃতি স্থানে। বর্তমানে ঢাকা, সোনারগাঁ, আড়াইহাজার, নরসিংদী, মনোহরদী প্রভৃতি স্থানে তৈরি হয়। আর ডেমরার হাট হচ্ছে জামদানির প্রধান বিক্রয় কেন্দ্র। জামদানি নকশা এখন শুধু শাড়িতেই সীমাবদ্ধ নেই। এমব্রয়ডারি পোশাক, শুভেচ্ছা কার্ড, বিয়ের আলপনা, চিঠির প্যাড এমনকি চামড়ার জিনিসপত্রেও বিস্তৃতি লাভ করেছে। প্রাচীনকাল থেকে এখন পর্যন্ত অক্ষুণ্ন রয়েছে জামদানির কদর। সময়ের প্রয়োজনে মসলিন, জামদানি কালের আবর্তে বিলীন হলেও আজও অক্ষুণ্ন রয়েছে ঢাকাই শাড়ির গৌরবময় জনপ্রিয়তা।


নকশি কাঁথা : নকশি কাঁথা বাংলাদেশের লোক ও কারু শিল্পের ঐতিহ্যমন্ডিত ও নান্দনিক নিদর্শন। পুরনো কাপড়ের কাঁথা সেলাই করে তার ওপর গ্রামবাংলার মহিলারা বিভিন্ন নকশা তোলেন-একেই বলে নকশি কাঁথা। এই নকশি কাঁথায় জড়িয়ে থাকে অনেক সুখ-দুঃখের স্মৃতি। ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, খুলনা, রাজশাহী, যশোর, ফরিদপুর, পাবনা, দিনাজপুর, বগুড়া প্রভৃতি জেলায় তৈরি হয় বিচিত্র ধরনের নকশা সংবলিত কাঁথা। এসব নকশি কাঁথার ব্যবহার ভেদে বিভিন্ন নামও রয়েছে। যেমন গায়ে দেয়ার কাঁথা, বিছানার কাঁথা, শিশুর কাঁথা, সুজনী কাঁথা, বর্তনী রুমাল কাঁথা, পালকর কাঁথা, বালিশের ঢাকনি, দস্তরখানা, পান পেঁচানী, আরশীলতা প্রভৃতি।


শিকাশিল্প : বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী লোক ও কারুশিল্প স্বতন্ত্র ও আপন মহিমায় সমুজ্জ্বল শিকাশিল্প। পাট হচ্ছে শিকা তৈরির প্রধান উপকরণ। তবে নকশি শিকা তৈরিতে কঞ্চি সুতলি, ঝিনুক, কড়ি, শঙ্খ, কাপড়, পোড়ামাটির বল ইত্যাদিও ব্যবহৃত হয়। বইপত্র, কাঁথা-বালিশ, শিশি-বোতল, বাসনপত্র, পাতিল-কলসি, আয়না-চিরুনি এসব সর্বত্রই বিভিন্ন সাইজের শিকা তৈরি করেন গ্রামীণ মাহলারা। হালে শিকার ব্যবহার কিছুটা কমলেও একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। গ্রামীন মহিলাদের তৈরি নকশি শিকার অসংখ্য আঞ্চলিক নাম রয়েছে, যেমন- উল্টাবেড়ী, ফুলটুংগী, রসুন দানা, আংটিবেড়, ফুলমালা, ডালিম বেড়, ফুলচাং, গানজা ইত্যাদি। বিদেশিদের কাছেও বাংলাদেশের শিকাশিল্প আবেদন তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। পাট দিয়ে ঐতিহ্যবাহী শিকা তৈরির পাশাপাশি আজকাল পাটের তৈরি টেবিল ম্যাট, মানি ব্যাগ, ফ্লোর ব্যাগ, নেট, প্লেটম্যাট, লেডিস ব্যাগ, দেয়াল সজ্জা ও গৃহসজ্জারও রকমারি সামগ্রী তৈরি হচ্ছে। এসব সামগ্রীও দেশ-বিদেশে সমানভাবে সমাদৃত হচ্ছে।

নকশি পাখা : নকশিকাঁথা, নকশি শিকা আর নকশি পিঠার মতোই বাংলাদেশের লোক ও কারুশিল্পের ঐতিহ্যের আরেক প্রতীক হচ্ছে নকশি পাখা। তালপাতা, সুপারীর পাতা ও খোল, সুতা, পুরনো কাপড়, বাঁশের বেতি, নারিকেল পাতা, চুলের ফিতা, পাখির পালক ইত্যাদি অতি সাধারণ ও সহজলভ্য উপকরণ দিয়ে পাখা তৈরি করা হয়। আগে গ্রীষ্মকালে শরীর ঠান্ডা করার জন্য গ্রামবাংলায় হাতপাখার ব্যাপক প্রচলন ছিল। এখনও গ্রামবাংলায় নকশি পাখার ব্যবহার রয়েছে। তা নগর জীবনের অসহনীয় লোডশেডিংয়ের সময়ও ব্যবহার করা হয়। এসব নকশি পাখার রয়েছে বিভিন্ন নাম- যেমন বাঘাবন্দী, শঙ্খলতা, কাঞ্চনমালা, সজনে ফুল ইত্যাদি। এক সময় বর, বধূ ও তাদের সঙ্গে আসা মেহমানদের বড় সাইজের তালপাতার হাতপাখা দিয়ে বাতাস করা হতো।

শীতলপাটি : বাংলাদেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এক শিল্পের নিদর্শন হচ্ছে শীতলপাটি। মুর্তা নামক এক ধরনের বেতি বা পাতি দিয়ে শীতলপাটি বোনা হয়। সিলেটের বালাগঞ্জ, রাজনগর, বরিশালের স্বরূপকাঠি, ফরিদপুরের সাতৈর, নোয়াখালীর সোনাগাজী, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা প্রভৃতি স্থানে উন্নতমানের শীতলপাটি তৈরি হয়। আজকাল মানিব্যাগ, হাতব্যাগ, কাঁধে ঝোলানোর ব্যাগ, টেলিম্যাট প্রভৃতি কাজে ব্যবহৃত হয় শীতলপাটি।


লোকচিত্র : লোকচিত্র বাংলাদেশের লোক ও কারু শিল্পের এক বর্ণাঢ্য ও ঐতিহ্যবাহী ভুবন। নানা সৃষ্টিতে রূপ লাভ করেছে সৃজনশীল চিত্রশিল্প। আবহমানকালের লোক সমাজের দৈনন্দিন জীবন, ধর্ম বিশ্বাস, লৌকিক আচার-আচরণ ধারণ করে আসছে এ দেশের এক অমূল্য সম্পদ চিত্রিত হাঁড়ি। অঞ্চলভেদে এসব চিত্রিত হাঁড়ির রয়েছে বিভিন্ন নাম। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই চিত্রিত হাঁড়ি, কলসি পাওয়া যায়। এরপরও ঢাকার ধামরাই, নয়ারহাট, টাঙ্গাইলের কালিহাতি, রাজশাহীর বসন্তপুর এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের বারোঘরিয়া প্রভৃতি এলাকার চিত্রিত হাঁড়ি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। রাজশাহীর শখের হাঁড়িতে রয়েছে বাংলাদেশের আবহমানকালের ঐতিহ্য। এসব হাঁড়িতে ঘোড়া, পাখি, শাপলা ফুল, পানপাতা, মাছ প্রভৃতি মটিফ ব্যবহৃত হয়।


মৃৎশিল্প : বাংলাদেশের লোক ও কারুশিল্পে উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে মৃৎশিল্প। এ শিল্পের হাজার বছরের ইতিহাসও রয়েছে। এ শিল্পকে ঘিরে গ্রামবাংলার অনেক পরিবার জীবন-জীবিকাও নির্বাহ করে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, কুমিল্লা, সিলেট, যশোর, দিনাজপুর, কক্সবাজার প্রভৃতি জেলার মৃৎ শিল্পীরা ঐতিহ্যগতভাবে মাটির জিনিসপত্র তৈরি করে আসছে। দেশের ঐতিহ্যবাহী মৃত শিল্পসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে হাঁড়িপাতিল, কলসি, সানকি, চুলা, শাক-সবজি, ফলমূল, খেলনা, পুতুল, ঘরের টালি, পানি সেচের নালি, ধর্মীয় প্রতিকৃতি, প্রাণীজ প্রতিকৃতি, অলঙ্কার প্রভৃতি। গ্রামীণ হাটবাজার এবং শহর-বন্দরেও মাটির জিনিসপত্র পাওয়া যায়।

 

কৃতজ্ঞতা- আখতার হামিদ খান


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon