রাজধানী ঢাকা থেকে ২৫ কিলোমিটার পূর্বদিকে সবুজের সমারোহ আর বনানীর শ্যামললিমায় মনোরম স্থাপত্যশৈলী এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ছায়া-ডাকা, পাখি-ডাকা, হৃদয়-ছোঁয়া নৈসর্গিক পরিবেশ পর্যটকদের মন কেরে নেয় সোনারগাঁও। এই সোনারগাঁয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সোনালি অতীতের এক সুবর্ণ অধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য স্মৃতি। সোনারগাঁয়ের নামকরণে মতভেদ রয়েছ। গবেষকদের মতে, সোনারগাঁয়ের প্রাচীন নাম ছিল সুবর্ণবীথি বা সুবর্ণগ্রাম। এই সুবর্ণগ্রাম থেকেই মুসলিম আমলের সোনারগাঁও নামের উদ্ভব।প্রবাদ আছে, মহারাজ জয়ধ্বজের সময় এ অঞ্চলে সুবর্ণবৃষ্টি হয়ছিল বলে এ স্থান সুবর্ণগ্রাম নামে পরিচিতি লাভ করে। কেউ কেউ বলেন, বার ভূঁইয়া প্রধান ঈসা খাঁর স্ত্রী সোনাবিবির নামানুসারে এর নাম হয়েছে সোনারগাঁও। সোনারগাঁও বাংলাদেশের ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জল প্রাচীন জনপদ। সোনারগাঁও জাতির ইতিহাস, সংস্কৃতি ও শিল্পকলার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। সোনারগাঁও মধ্যযুগে ছিল মুসলিম সুলতানদের রাজধানী। বর্তমানে সোনারগাঁও নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। সোনারগাঁ উপজেলার বর্তমান আয়তন ১১৭.৬৬ বর্গ কিলোমিটার এব নারায়ণগঞ্জ জেলা সদর থেকে এটি প্রায় ২১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
সোনারগাঁয়ের ইতিহাস জানার জন্য পৌরাণিক উপাখ্যান, কিংবদন্তি বা জনশ্রুতির ওপরই বেশি নর্ভর করতে হয়। মধ্যযুগীয় এই নগরটির অবস্থান নির্ণয় করা কঠিন। সোনারগাঁয়ের পূর্ব মেঘনা নদী,দক-পশ্চিমে থীতলক্ষ্যা, দক্ষিণে ধলেশ্বরী এবং উত্তরে ব্রষ্মপুত্র দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকায় এলাকাটি উন্নত ছিল। সেজন্য রাজা-বাদশাগণ সানন্দে সোনারগাঁয়ে বাংলার রাজধানী গড়ে তুলেছিলেন। ধারণা করা হয় ঐতিহাসিকভাবে সোনারগাঁয়ের উদ্ভব প্রাক-মুসলিম যুগ থেকেই।
ঐতিহাসিক স্বরূপচন্দ্র রায়ের মতে, সুবর্ণগ্রাম একটি প্রাচীন গ্রাম। বৌদ্ধ আমল থেকেই সুবর্ণগ্রাম শুর, পাল এবং দেব প্রভৃতি রাজার রাজধানী হিসেবে মর্যাদা পেয়েছিল। সুবর্ণগ্রাম বা সোনারগাঁ প্রাচীন বঙ্গের বিশেষ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। সোনারগাঁয়ের প্রাচীনতা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য দলিলের অভাবেই কোনো সঠিক সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়া যায়নি।